একদা এক ভাই ও বোন ছিল যারা একে অপরকে খুব ভালোবাসত তারা অনাথ ছিল তারা যখন খুব ছোট ছিল তখন তাদের মা মারা যায় আর বাবা অসুস্থ ছিল মৃত্যুর পূর্বে তাদের বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন কিন্তু তাদের সৎ মা তাদের প্রতি খুব নিষ্ঠুর দয়াহীন ছিলেন| একদিন ভাই তার বোনকে বলেছিল আমার সোনা বোন আমাদের সৎমা আমাদের রাতের খাবার জন্য শুকনো পাউরুটির টুকরো দেয় আর আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য ধুমকি দেয়, চলো আমরা পালিয়ে যাই দুনিয়াকে বোঝার চেষ্টা করি ; তারা বেরিয়ে পড়ে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়, দিনের শেষে তার একটা বড় জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছে তখন বৃষ্টি শুরু হয় তার খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত আর দুঃখী ছিল তার একটা ভাপা গাছের ভেতরে ঢুকে আর সকালে অবধি ঘুমিয়ে থাকে|
তাদের যখন ঘুম ভাঙ্গে তাদের আশ্রয় স্থল থেকে বেরোয় আর ঘোরাঘুরি করতে থাকে জলের খোঁজে|
মেয়েটির ভাই : আমার খুব জল পিপাসা পেয়েছে
মেয়েটি : আমরা যদি কোন জলপ্রপাত বা ছোট নদী পেতাম
মেয়েটির ভাই : শোনো কাছেই কোথাও জল পড়ছে
তারপর সে তার বোনের হাত ধরে তারা দুজনে দৌড়ে জল খুঁজতে থাকে| এখন ওই বাচ্চাদের সৎ মা একজন ডাইনী ছিল সে চুপিচুপি তাদের পিছু নিয়েছিল সে জঙ্গলে সব নদীয়ার ঝরনা মন্ত্রিত করে দিয়েছিল ভাই বোন দু'জনই ঝর্ণার কাছে আসে আর বোন ঝর্না থেকে আওয়াজ পায় যে কেউ আমার জল খাবে সে বাঘ হয়ে যাবে
মেয়েটি : দাদা দারাও তুমি যদি এই জল খাও তাহলে তুমি জংলি জানোয়ার হয়ে যাবে ও আমাকে মেরে খেয়ে ফেলবে
ভাইয়ের খুব তেষ্টা পেয়েছিল তা সত্ত্বেও সে বোনের কথা শুনে নিজের তেষ্টা মেটায় না ; আর তাকে বলে প্রিয় বোন ঠিক আছে আমি পরের ঝরনা অবদি অপেক্ষা করবো | এভাবে ওরা পরের ঝরনার কাছে পৌছায় ; কিন্তু যখনি ওরা ঝরনার কাছে পৌছায় তখনি ঝরনার আওয়াজ শুনতে পায় যে কেউ আমার জল খাবে সে নেকড়ে হয়ে যাবে
মেয়েটি : দাদা আমি তোমায় অনুরোধ করছি তুমি এ ঝরনার জল খেয় না, নয়লে তুমি নেকড়ে হয়ে যাবে ও আমাকে খেয়ে ফেলবে ;
ভাই আবার নিজের মনকে কাবু করে বলে যে এখন জল খাবে না কিন্তু সে টাও বলে এখন আমার খুব জল পিপাসা বেড়ে গেছে সে জন্য এর পরের ঝরনার জল আমাকে খেতেই হবে| পাশেই একটি ছোট ঝরনা বই ছিল কিন্তু সেখানেও ঝর্না থেকে আওয়াজ আসছিল তার বোন সেটা শুনতে পেয়েছিল যে কেউ আমার জল খাবে সে হরিণ হয়ে যাবে
মেয়েটি : প্রিয় দাদা আমার খেয়োনা এ জল
সে বলতেই থাকছিল কিন্তু সে একটু দেরি করে ফেলে কারণ তার ভাই আগেই ঝুঁকে জল খেতে শুরু করেছিল ; দেখতে দেখতে হরিণ শিশুতে পরিণত হল কিন্তু শিশুটা পালালো না বনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো তখন বোন বলল তুমি ঠিক করে দারাও সোনা ভয় পেয়ো না আমি তোমায় খেয়াল রাখব আর কখনো তোমায় একা ছাড়বো না|তারপর সে সোনালী ফিতে বার করে আর ওই হরিণের গলায় আস্তে করে বেঁধে দেয় সে নিচে নরম ঘাসে কর্তৃত্ব করে আর তাকে একটা পাতলা তারে বাঁধে আর সেটা হরিণের সোনালী পাঠটায় বেঁধে দেয় তারপর সে তাকে নিয়ে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে যায় কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরে সে একটা ছোট্ট কুটির দেখতে পায় তারপর সে ভাবে এই কুটির তাদের নতুন বাসা হতে পারে তার পার সে হরিনটানা কে নিয়ে ভেতরে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়| রোজ সকালে সে নিজের জন্য জাম নিয়ে আসতো আর হরিণ ছানার জন্য তাজা ঘাস নিয়ে নিত সেটা হরিণ ওর হাত থেকে খেত তারপর সে বাইরে গিয়ে খেলত এভাবেই তারা কিছু বছর জঙ্গলে কাটায়| এখনো ছোট বোন একজন সুন্দরী যুবতী আর হরিণ ছানা আর তার সুডোল হরিণে পরিণত হয়েছে একবার এক রাজকুমার তার বন্ধুদের সাথে জঙ্গলে শিকার করতে এলো তারপর রণবীরই শিকারি কুকুরের ডাক শিকারিদের চিৎকারের আওয়াজ পুরো জঙ্গলে ঘুরতে লাগল ;
সেই আওয়াজ হরিণ শুনতে পেল সে তার বোনকে বিনতি করতে থাকে আর একবার গিয়ে দেখতে দাও বলে দরজা খুললো আর বলল দেখ আমি তোমায় যেতে দিচ্ছি কিন্তু সন্ধ্যায় যখন তুমি ঘরে ফিরবে তখন দিদি আমার ভেতরে আসতে দাও এটা বলতে ভুলো না যেন| শীঘ্রই শিকারি নজর গলায় সোনালী পাট্টা বাধা হরিণের পড়ল আর তার দিকে ইশারা করে রাজকুমার কে দেখিয়ে দিলো তারপর সে তাকেই শিকার করবে ভেবে নিল সে খুব দ্রুত তার পিছু নিল কিন্তু হরিণ অনেক বেশি দ্রুততম ছিল সে দ্রুত পালিয়ে গেল শিকারিরা তার পেছনে আসছে না এটা বোঝার পর সে তার ঘরের দিকে চলতে শুরু করে কিন্তু রাজকুমারের একটা শিকারি তার পেছনে ছাড়ছিলই না ; শিকারি দূর থেকে দেখে খুব আশ্চর্য হয়েছিল যে সই হরিণ দরজার কাছে গিয়ে খটখট করে আর গিয়ে সেখানে কথাও বলে দিদি আমার ভেতরে আসতে দাও|
ওই দরজা অল্প খোলে ও তখনই বন্ধ হয়ে যায় শিকারি যতটা দেখা তার কৌতূহল আরও বেড়ে যায় আর শীঘ্রই সেরাজকুমারের কাছে পৌঁছে যা কিছু দেখেছিল তার জানায় আর এই শুনে রাজকুমার ও আশ্চর্য হয়|
রাজকুমার : আমাদের এই রহস্য থেকে পর্দা ওঠাতেই হবে
পরের দিন রাজকুমার ওই শিকারিকে নিয়ে ছোট বাড়িতে পৌছল ; যখন রাজকুমার ওখানে পৌঁছলো দরজা আধখোলা ছিল তারপর রাজকুমার একাই ভেতরে গেল সামনে এক অপরূপ সুন্দরী মেয়েকে দেখে সে খুবই আশ্চর্য হল আর সে খুব খুশি হলো|মেয়েটা ভয়,ভয় চোখে তাকালো আর কিছুক্ষণ কথা বলার পর রাজকুমার মেয়েটির হাত ধরল আর বলল তুমি আমার সাথে আমার মহলে যাবে কি আমার স্ত্রী হয়ে ;
মেয়েটি : এ তো খুব খুশির কথা কিন্তু আমি আমার প্রিয় হরিণ ভাইকে ছাড়তে পারব না ও আমার সাথে থাকবে ;
রাজকুমার : সে তোমার সাথে থাকবে, সারা জীবন ;
তারা কথা বলছিল তখন হরিণ উঠে দাঁড়াল সে খুব খুশি হয়েছিল| শীঘ্রই তাদের বিয়ে অত্যন্ত ধুমধামের সাথে হয়ে গেল তাদের সুখী দেখে তাদের দুষ্টু সৎ মা যে তাদের শাপ দিয়েছিল তার মনের জলন শুরু হলো আসে তাদের বরবাদ করার পণ নিল একেবারেই শেষ করে দেবে সে ভাবল সে একজন দাই রূপ ধারণ করে সেইসময় মহলে পৌঁছে যখন রানী একটা খুব সুন্দর বাচ্চার জন্ম দিয়েছে রাজা তখনই তাকে বাচ্চা দেখভালের জন্য রেখে দেয় তারপর সে একদিন রানীকে স্নানের ঘরে আটকে দিয়ে বাচ্চাদের দোলনা থেকে উঠে বারান্দা থেকে নিচে ফেলতে যাচ্ছিল সেই সময় হরিণ তার বোনকে বাঁচাতে সেই জায়গায় এসে যায় পরের মুহূর্তে ডাইনীকে বেঁধে ফেলে তারপর রাজকুমার এসে দেখে যায় কিভাবে সেই হরিণ তার বোনপো কে বাঁচায় তারপর রানি তার সৎ মাকে চিনতে পারে আর রানি রাজা কে বলে যে কিভাবে তাদের সৎ মা তাদের কষ্ট দিয়েছিল এটা শুনে রাজা তাকে আজীবন কারাবাস এর শাস্তি দেয় তখন সেই সৎ মা নিজের ভুল বুঝতে পারে আর রানীর ভাইকে যে হরিণ হওয়ার শাপ দিয়েছিল তার থেকে মুক্ত করে
আর যেইনা সে তার শাপ তুলে নেয় তার সামনে সঙ্গে সঙ্গেই একটা সুন্দর যুবক প্রকট হয় আর এই ভাবেই তারা সারা জীবন হাসি খুশিতে কাটাতে থাকে
0 মন্তব্যসমূহ